আমি এই কয়েক বছরে বিভিন্ন মানুযের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি যে অনেকেই যথার্থই বুঝতে পারেন যে বিনীয়োগ তার জীবনের জন্য বা তার পরিবারের জন্য অবশ্যই প্রোয়োজন কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করার জন্য তারা জীবনে অনেক কিছু অজান্তে হারিয়ে ফেলেন।
এই সিদ্ধান্তহীনতার একটি অন্যতম কারন আর্থিক বিষয়ে সঠিক ধারনার অভাব এবং জীবনের জন্য কোনটা আরজেন্ট এবং কোনটা ইমপরটেন্টের তার গুরুত্ব বুঝতে না পারা। অনেকের কাছে আরজেন্ট হল প্রতি বছর দু বার বা একবার করে বেড়াতে যাওয়া, বা স্ত্রীর জন্য দামী গহনা কেনা, বা হাই ই.এম.আই. দেওয়ার চুক্তিতে দীর্ঘমেয়াদী লোন নিয়ে ফ্লাট কেনা, ইত্যাদি আরো কত কি। এগুলো করতে গিয়ে যে ইম্পর্টেন্ট কাজগুলি বাদ চলে যায় তা হল – নিজের রীটায়ারমেন্ট পরিকল্পনাটি বা সন্তানের শিক্ষার পরিকল্পনায় দেরী হয়ে যায় বা আদৌ হয়ই ওঠেনা। এর পরীনতি কিন্তু ভয়ঙ্কর হতে পারে।
ধরা যাক দুজন যুবক একজনের নাম “সিদ্ধান্ত”, আর একজন হল “করুণা”, দুজনেরই বয়স বর্ত্তমানে ৩০ বছর, দুজনেরই মাসিক আয় ১৫০০০ টাকা, উভয়েই রীটায়ারমেন্ট নিতে চায় ৬০ বছর বয়সে,দুজনেই তাদের আর্থিক পরীকল্পনা কারীর সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পারলেন যে তাদের রীটায়ারমেন্টের জন্য প্রোয়োজন ১ কোটি টাকার এবং তার জন্য এখন থেকে প্রতিমাসে ২০০০ টাকা করে জমা রাখা প্রোয়োজন। তাহলে ১৫% রীটার্ন হলে ঐ করপাশটি ভলো ভাবে হওয়া সম্ভব।
বাস্তবে “সিদ্ধান্ত” প্রথম মাসথেকেই ২০০০ টাকা করে জমা শুরু করে তার রীটায়ারমেন্ট পরিকল্পনাটি শুরু করে দিল। আর “করুণা” ভাবল একটু সামলে নি, তার পর শুরু করব। এই করতে করতে ১০টা বছর পেরিয়ে গেল। তখন সে আবার ঐ আর্থিক পরিকল্পনা কারীর কাছে গেল এবং জানতে পারল যে এখন তাকে ঐ ১ কোটি টাকার করপাশটি তৈরী করতে প্রতি মাসে দিতে হবে ৭৬০০ টাকা করে, যদি ফান্ডটি থেকে আগের মতই ১৫% রীটার্ন হয়।
যদি ১২% হারে রীটার্ন হয় (যেটি ২০ বছরের জন্য যুক্তিসঙ্গতও বটে) তাহলে প্রতিমাসে দিতে হবে ১০৯০০ টাকা করে। পরিকল্পনা কারী শুধু জানতে চাইলেন, এখন কি আপনি সত্যিই আপনার রীটায়ারমেন্ট পরিকল্পনার জন্য তৈরী? তখন করুণা ভাবল আরো কিছুটা সময় পেলে ভাল হত এবং কিছুটা বিরক্ত এবং হতাশ হয়ে ঐ আর্থিক পরিকল্পনা কারীকে জিজ্ঞাসা করল যে সে যদি আরো ১০ বছর পর শুরু করে তখন কত করে দিতে হবে? পরিকল্পনাকরী জানতে চাইলেন তার মানে আপনি ১০ বছর জমা করবেন তাইতো? তাতে করে আপনি রীটার্ন আশা করতে পারেন ১০%। এবং এখেত্রে আপনাকে প্রতি মাসে দিতে হবে ৫০,০০০টাকা করে। শুনে যথারীতি “করুণা”র মাথায় বাজ পরল।
এই সিদ্ধান্ত হীনতা যে শুধু রীটায়ারমেন্ট পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ঘটে তা নয়।এই ভাবেই সঠিক সময়ে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার জন্য যে কত স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে তার ঠিক নেই। এরপর এই “করুনা” রাই ছুটে যায় বিভিন্ন হাই রীটার্নের অযৌক্তিক এবং অবাস্তব স্কীমের দিকে এবং প্রতারিত হয়।
সুতারাং মাথায় রাখতে হবে,আপনাকে বিশাল কিছু টাকা প্রতি মসে জমা করতে হবেনা, বেশী সময় ধরে জমা করতে হবে। কত টাকা করে মাসে জমা করছেন তারথেকেও গুরুত্বপূর্ন হল কত বেশী সময় ধরে জমা করার প্ল্যানটি চালিয়ে যাচ্ছেন ।