আপনিকি নিশ্চিত যে আপনার ইনসিওরেন্স, মিউচ্যালফান্ড প্রভৃতিতে আপনি যে ব্যক্তিকে নমিনী হিসাবে নাম দিয়েছেন তিনিই আপনার অবর্তমানে আইনত আপনার ঐ অর্থের মালিকানা পাবেন? বেশিরভাগ মানুষের বিষয়টি সম্বন্ধে সম্যক ধারনা না থাকার জন্য পরবর্ত্তী সময়ে বেশ বিপদের মুখে পড়েন। একজন ব্যক্তির অবর্তমানে তার নমিনী যখন ঐ টাকা পেতে অসুবিধায় পড়েন, তখন সাভাবিকভাবে প্রথমেই তিনি যেখানে টাকা জমাছিল ঐ হাউসটিকে বা সংস্হাটিকে দোষারোপ করেন। আসুন কাউকে দোষারোপ না করে বিষয়টিকে একটু জেনে বুঝে নেওয়া যাক।
আমরা অনেক সময়ই অনেক জিনিষ নিজেদের মনগড়া করে ধরে নি। আইন কিন্তু আমাদের এই ধরে নেওয়াকে কোনো গুরুত্ব দেয় না। যার জন্য আপনি সঞ্চয় করেন বা বিনয়োগ করেন তিনি হতে পরেন আপনার স্ত্রী/স্বামী, পুত্র/কন্যা, মা/বাবা, ভাই/বোন ই্ত্যাদি। এবং এদেরকেই আপনি নমিনী করে থাকেন। এখন এদের সবাইকেতো আপনি নমিনী করছেন না, হয়তো কোনো একজন বা দুজনকে নমিনী করছেন।
এখন আপনার অবর্তমানে বাকিরা যদি ঐ অর্থ আইনত দাবি করে তাহলে যাকে আপনি নমিনী নিয়োগ করেছেন তিনি তা আইনসঙ্গত ভাবে তাদের মধ্যে ঐ অর্থ বন্টন করতে বাধ্য থাকবেন। কারন নমিনী আইনের চোখে আপনার অবর্তমানে আপনার রেখে যাওয়া অর্থের একজন ট্রাস্টি বা কেয়ারটেকার মাত্র।
ইনসিওরেন্স আইনের ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে Nomination is a right conferred on the holder of a Policy of Life Assurance on his own life to appoint a person/s to receive policy moneys in the event of the policy becoming a claim by the assured’s death. The Nominee does not get any other benefit except to receive the policy moneys on the death of the Life Assured. A nomination may be changed or cancelled by the life assured whenever he likes without the consent of the Nominee.
ধরুন ‘ক’ বাবু ৫৮ বছর বয়সে একটি একসিডেন্টে গত হয়েছেন। তার সন্তানরা যেহেতু প্রতিষঠিত, ‘ক’ বাবু তার স্ত্রীকে তার ইনসিওরেন্স এবং মিউচ্যালফান্ডের নমিনী করে রেখেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত ‘ক’ বাবু চাইলেও তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী একা ঐ অস্হাবর সম্পত্তির মালিকানা পাবেন না, যদি তার সন্তানেরা আইন সজ্ঞত ভাবে ঐ অর্থ দাবি করে বসে। সেখেত্রে ঐ সন্তানরাও সমান অংশীদারীত্ত দাবি করতে পারে।
এর একমাত্র আইনসঙ্গত সমাধান হল নমিনেশন থাকলেও উইল তৈরী করে রাখা।
এবার বলি কোথায় কত জনকে আপনি নমিনী করতে পারবেন-
কত জনকে নমিনী করা যায় |
|
|
|
ব্যাঙ্ক সেভিংস বা কারেন্ট একাউন্ট |
একজন |
|
ব্যাঙ্ক লকার |
একজন হোল্ডার হলে একজন, একাধিক হোলডার হলে একাধিক |
|
ডিম্যাট একাউন্ট |
একজন |
|
কোম্পানি ফিক্সড ডিপোজিট |
একজন |
|
পি.পি.এফ |
একাধিক |
|
সোসাইটির মাধ্যমে প্রপার্টি |
একাধিক |
|
মিউচ্যালফান্ড |
একাধিক |
|
ইনসিওরেন্স |
একাধিক |
উপরের গুলির মধ্যে ব্যাঙ্ক একাউন্ট, ব্যাঙ্ক লকার, মিউচ্যালফান্ড, ইনসিওরেন্স সোসাইটির থেকে প্রপার্টি এগুলিতে আইনত নমিনীর ভূমিকা হল ট্রাস্টী বা কেয়ারটেকারের। অনেক খেত্রে ব্যাঙ্ক আপনার অবর্তমানে আপনি যাকে নমিনী করে রেখেছেন তার কাছথেকে সাকসেশন সার্টিফিকেট চাইতে পারে। উইল থাকলে এ খেত্রে কোনো অসুবিধা হয় না। এ প্রসঙ্গে মনে রখতে হবে উইল বা নমিনেশন যে কোনো সময়ই এবং যতবার খুসি পরিবর্তন করা যায়।
ডিম্যাট একাউন্ট এবং কোম্পানি আইন অনুযায়ী যে সমস্ত ইনস্ট্রুমেন্ট ইসু হয় – যেমন কোম্পানি ফিক্সড ডিপোজিট, ডিবেন্চার, শেয়ার এগুলিতে নমিনী নিজেই মালিকানা পায়। কোম্পানি আইনের ১০৯(এ) এবং ডিপোজিটারি আইনের ৯.১১ ধারা অনুযায়ী এইগুলির খেত্রে যদি না উইল থাকে তহলে এই খেত্র গুলিতে যাকে নমিনি করা হয় তিনিই সমস্ত অর্থের মালিকানা পাবেন
যে সমস্ত খেত্রে একাধিক নমিনী করার সুযোগ আছে সেখানে প্রত্যেক নমিনীর নাম, সম্পর্ক,এবং প্রত্যেকের অংশ নির্দেশ করে দিতে হবে।
ব্যাঙ্ক একাউন্ট, ব্যাঙ্ক লকার, মিউচ্যালফান্ড, ইনসিওরেন্স সোসাইটির থেকে প্রপার্টি এগুলিতে যেহেতু নমিনীর ভূমিকা যেহেতু ট্রাস্টের, তাই এই সমস্ত খেত্রে আপনার অবর্তমানে যে ব্যক্তিকে আপনি নিশ্চিত করতে চান আপনার প্রাপ্য অর্থের তার জন্য উইল আবশ্যক।
2 thoughts on “নমিনীর ভূমিকা”
Very useful information Mr. Roy, thanks.
Thanks for this valuable information.