আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বা অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে যখন কোনও খারাপ কিছু ঘটে, তখন তার কারণে আমরা নিজেরা যেমন দুর্ভোগে ভুগি, ঠিক একই ভাবে আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যরাও ওই একই ভোগান্তি ভুগে থাকেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে যায়। কিন্তু একটু ভেবে দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে, যদি আমরা আগে থেকে কিছু ব্যাপারে যদি সাবধানতা অবলম্বন করে চলি তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতিগুলির সামনাসামনি আমাদের হতে হয় না, বা হলেও সেগুলিকে আমরা খুব সহজেই মোকাবিলা করতে পারি।
তাহলে একবার দেখে নেওয়া যাক, আমরা এই তথাকথিত ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি নিয়ে নিজেদের কতটা প্রস্তুত করে রেখেছি? আমি আপনাদের একটা অনুরোধ করব, দয়া করে এই লেখাটি শুধুমাত্র গড়গড় পড়ে যাবেন না। পরিবর্তে নিচের প্রশ্নগুলি প্রতিনিয়ত আপনি নিজেকে করতে থাকুন এবং আপনার নিজের ভেতর থেকে কি উত্তর আসে সেটা পরখ করে নিন।
পরিস্থিতি ১ : যদি আগামীকালই আপনার মৃত্যু হয়?
অনেকেই আমাকে এই প্রশ্নটা শুনে বলেছেন, এইভাবে সরাসরি প্রশ্নটা করা ঠিক নয়। মাফ্ করবেন, আমি আপনাকে আঘাত করার জন্য প্রশ্নটি এইভাবে করছি না। প্রশ্নটি এই ভাবে করার কারণ, যে বিষয়টি বলতে যাচ্ছি সেটিকে আপনি গুরুত্ব সহকারে নিতে পারেন।
আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবার আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কিভাবে তুলতে হবে তা তিনি পারবেন? আপনার পরিবার কি আপনার লাস্ট এটিএম পিন জানেন?
আপনার স্ত্রী বা সন্তানরা বা আপনার পরিবার কি জানে যে আপনি আপনার বন্ধু বা আপনার সহকর্মীর কাছ থেকে কত টাকা পান? বা তারা কি জানে আপনার কত টাকার বা কোথায় ইনসিওরেন্স করা আছে?
সেগুলি উদ্ধার করার জন্য কার সঙ্গে বা কোথায় যোগাযোগ করতে হবে? আপনার কোথায় কি ইনভেস্টমেন্ট আছে, সেগুলি কি তারা জানে? তারা কি আগামী এক বছর আপনার অবর্তমানে সংসার চালিয়ে নিতে পারবে? যদি তাও পারে, তাহলে আগামী ৩০ বছরের জন্য কি হবে? সর্বোপরি, আপনি কি আপনার পরিবারের সুবিধার জন্য কোনও জরুরী ফাইল তৈরি করে রেখেছেন?
পরিস্থিতি ২ : কি হবে যদি আপনি হঠাৎ করে কাজ হারান?
আমি জানি, এই প্রশ্নটির পর আপনি আমার সাথে তর্ক জুড়ে দিতে পারেন, বা প্রশ্নটিকেই অগ্রাহ্য করতে পারেন। এ অধিকার আপনার আছে।
কিন্তু একবার কিছুক্ষণের জন্য কল্পনা করুন। আপনি যে কাজটি করে জীবিকা নির্বাহ করেন, কোনও এক অজানা কারণে হয়তো সেটি আর করতে পারছেন না, তাহলে কি হবে? আপনার চাকরি সুরক্ষিত আমি জানি, আপনার যোগ্যতাকেও আমি ছোট করছি না।
কিন্তু অনেক কারণে আপনি কর্মহীন হয়ে যেতে পারেন। যেমন মানসিক ভরসাম্য হীনতা (Mental reterdation), দৈহিক সক্ষমতা হীনতা (Physical disability) ইত্যাদি আরও অনেক কিছু।এমত অবস্থায় কি আপনি আপনার পরবর্তী ১২ মাসের ই.এম.আই পেমেন্ট করতে পারবেন?
এমত অবস্থায় কি আপনি আপনার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে কোনও সিনেমা দেখতে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ৫০০০ টাকা খরচা করে খাওয়ার সাহস দেখাতে পারবেন? নাকি তাদেরকে বলবেন যে চলো বাড়ির সবাই মিলে একসাথে বসে ল্যাপটপে সিনেমা দেখে নেবো? এমত অবস্থার সামনে পড়লে কি আপনি যেমন প্রত্যেক বছরে দুবার করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যেতেন, তা করতে পারবেন? আমি আর প্রশ্ন বাড়ালাম না।
উপরের প্রশ্নগুলির উত্তর আপনার জানা। ওই উত্তরগুলির ওপরেই নির্ভর করছে আপনি ওই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য নিজেকে কতটা প্রস্তুত রেখেছেন।
পরিস্থিতি ৩ : কি হবে যদি আপনার জরুরী ভিত্তিতে পঁাচ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়?
আমি অনেক মানুষকে দেখেছি কোনও বিপদে পড়লে জরুরী ভিত্তিতে ১ লাখ টাকার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খেতে। আমি জানি আপনার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কিন্তু যদি ঐ টাকাটি ১ লাখ না হয়ে ৫ লাখ হয়, তাহলে কি একই অবস্থা হবে? যদি আপনাকে ১ মাস সময় দেওয়া হয় তাহলেও কি আপনি ব্যবস্থা করতে পারবেন? অনেক কারণে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। কোনও চিকিৎসাজনীত জরুরী পরিস্থিতি তৈরি হলে বা আপনার পছন্দের বাড়ি বা গাড়ির জন্য ডাউন পেমেন্ট দেবার জন্য বা আরও কত কারণে।
ঈশ্বরের অশেষ করুণা যে, আপনি এই পরিস্থিতি সামনে আসেননি। কিন্তু ভগবান না করুন, যদি এমত পরিস্থিতির সামনাসামনি হতে হয় তার জন্য কি আপনি নিজেকে প্রস্তুত রেখেছেন?
পরিস্থিতি ৪ : কি হবে যদি হঠাৎ আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?
ঈশ্বর না করুন, কোনও দুর্ঘটনাজনিত কারণে হঠাৎ করে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল। যদি এমত অবস্থায় আপনি সজ্ঞানে থাকেন তাহলে হয়তো আপনি আপনার পরিবারকে এই অবস্থায় কি কি করা উচিত বা কোথায় আপনার স্বাস্থ্য বীমার কাগজপত্র আছে বা তার জন্য কি করণীয় তা নির্দেশ দিতে পারবেন।
কিন্তু যদি কোনও কারণে আপনি সজ্ঞানে না থাকেন? তাহলে সামান্য কয়েক হাজার টাকার জন্য আপনার পরিবারের কাউকে অন্য পরিজনদের কাছে হাত পাততে হবে না তো? তারা কি জানেন, কোথায় আপনার জরুরী অবস্হার জন্য অর্থ রাখা আছে? কিভাবে আপনার গচ্ছিত এমারজেন্সী ফান্ড থেকে অর্থ তুলতে হবে?
আচ্ছা, আপনার পরিবার আপনার স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানীর নাম জানেন তো? সাস্হ্য বীমার কার্ড কোথায় রাখাথাকে তারা জানেন তো? অ্যাম্বুলেন্সের ফোন নম্বর কি আপনার পরিবারের কাছে আছে?
সব থেকে বড় কথা, আপনি কি জরুরীকালীন অবস্থায় আপনার পরিবারের কাছে আর্থিক বিষয়গুলি সহজতর করার জন্য কোনও এমারজেন্সি কিট বা ব্ল্যাক বক্স–এর ব্যবস্থা রেখেছেন?
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিন যে আপনি এখনও পর্য্যন্ত উপরের পরিস্থিতিগুলির একটিরও সামনাসামনি হননি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যদি সামনাসামনি হতে হয় তাহলে এখন আপনি তৈরি তো?
আমি জানি, এই লেখাটি পড়ার পর অনেকেই হয়তো বলবেন, এত সাবধানতা নিয়ে কি জীবনে বাঁচা যায় না বা অন্য কিছু।
আমি আমার কাজটুকু শুধু করেছি। এবার আপনি আপনার প্রীয়জনদের জন্য নিজেকে আস্তে আস্তে তৈরি করবেন কি না, সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার।