আমরা অনেকেই চাই ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে । অনেকেই ভাবেন যার অনেক অর্থ আছে একমাত্র সেই পারে আনেক বিনিয়োগ করতে এবং সেই বিনিয়োগ থেকে অনেক রীটার্ন পায় । কথাটি সব ক্ষেএে সত্যি নয় । বিনিয়োগ করার জন্য অর্থের অবশ্যই প্রযোজন, তবে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করলেই যে আপনি অনেক রীটার্ন পাবেন এমন কোনো কথা নেই । দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য অর্থ ছাড়াও আরো কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলা প্রয়জন ।
সর্বপ্রথম প্রোয়জন আপনি কি কারনে বিনিয়োগ করতে চাইছেন সেই লক্ষটি পরিষ্কার করে নির্ধারন করা, এবং কোন মাধ্যমটির মাধ্যমে আপনি আপনার কাঙ্খিত লক্ষটি পুরন করতে চান সেটি কোনো আর্থিক পরামর্শ দাতার পরামর্শ মত ঠিক করা। কোনো আর্থিক বিষয়ে বিষেষজ্ঞ ব্যত্তিই একমাএ পারবেন আপনার ঝুঁকি নেবার ক্ষমতা যাচাই করে সঠিক মাধ্যমটি নির্বাচন করতে।
এরপর যেটি প্রোয়জন সেটি হল “ বিনিয়গের যথাযথ মানসিকতা “(Proper Investment Mentality) । এটি বিনিয়োগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এই মানসিকতা আপনার সম্পূর্ন নিজস্ব, এটা কেউ আপনাকে তৈরী করে দিতে পারবে না। কি করে এই মানসিকতা আপনি তৈরী করবেন তার বিভিন্ন উপায় আপনাকে বলে দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু ওটি আপনাকে নিজেকেই তৈরী করতে হবে।
বিনিয়োগের সঠিক মানসিকতা বোঝানোর জন্য আমি চীন দেশের এক জাতীয় বাঁশ গাছের (Chinese Bamboo tree) উদাহরন তুলে ধরছি। চীন দেশে এক ধরনের বাঁশ গাছ হয় যেটিকে বলা হয় Chinese Bamboo Tree। এই গাছটি বেড়ে ওঠে অদ্ভূতভাবে। সাধারনভাবে এই গাছটি ৬৩ মাসে অথাৎ ৫ বছর ৩ মাসে সবাধিক ৮০ ফুট উচচতায় বৃদ্ধী পায়। অবাক করা ব্যপার হল, এই গাছের বীজ বপন করার পর ৫ বছর তার লাগাতার পরিচর্জা করার পরও কিন্তু মাটির উপরে এই গাছের কোনো অংশই দেখাই যায় না। প্রতিদিন সঠিক ভাবে পরিচর্জা করার পরেও নয়। এই ৫ বছর যদি সঠিক দেখাশোনা করা হয়ে থাকে তাহলে পরের মাত্র ৩ মাসে এই গাছটি ৮০ ফুট অর্থাৎ প্রায় ৮ তলা উচুঁ বাড়ীর সমান উচ্চতা লাভ করে। অবিশাষ্য তাই না?
দীর্ঘকালীন বিনিয়োগের খেত্রে ঠিক একই কথা প্রযোজ্য। বিশেষ করে ইকুইটি বা ইকুইটি নির্ভর মিউচ্যাল ফান্ড এর খেত্রেও উপরের উদাহরনটি বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। অনেকেই আমরা অনেক সময়ই কারুর পরামর্শে হোক বা কাউকে দেখে হোক আমরা ইকুইটি মিউচ্যাল ফান্ডে অর্থ বিনিয়োগ করে ফেলি কিন্তু ঐ গাছটির বড় হওয়ার মত অপেক্ষ্যা করতে রাজী থাকি না। ফলশ্রুতি হিসাবে যা হবার তাই হয়, গাছ আর দেখা যায় না।
ঠিক একই ভাবে অনেকে SIP পদ্ধতিতে ইনভেসটমেনট শুরুকরেন, কিন্তু কিছুদিন পর গাছের অর্থাৎ রীটার্ন না দেখতে পেয়ে জমি ছেড়ে চলে যায়। তারা কোনোদিনই ৮ তলা বাড়ীর সমান উচুঁ গাছের দেখা পান না। তাদের কাছে মনে হয় এসব গল্প কথা। কারন তিনি তখন দেখতে পান তার SIP রীটার্ন থেকে ব্যাঙ্কের রেকারিং ডিপোজিটের রীটার্ন অনেক বেশী। তিনি তখন তার ১০ বছরের লক্ষের কথা বেমালুম ভুলে যান। এটা ঘটে সঠিক বিনিয়োগ মানসিকতা তৈরী না হওয়ার জন্য।
ঘটনাটা হয় অনেকটা চীন দেশের হতাশ চাষীর মত। ঐ হতাশ চাষীও একই ভাবে বাঁশ গাছেরই বীজ বপন করেছিল কিন্তু সে যখন দেখল তার আশপাশের চাষীরা ওন্য কিছু চাষ করে তাদের ফসল ঘরে তুলছে, অথচ তার বাঁশ গাছের বীজ এখোনো মাটির নীচে, মাটির ওপরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, তখন সে বেমালুম ভুলে যায় যে সে বাঁশ গাছের চাষ করেছে, ধান বা গম নয়।
সে ভুলে যায় যে সে যে ক্ষেএ টি ছেড়ে চলে যাচ্ছে ওখানেই বেড়ে উঠবে আর কিছু মাসের মধ্যে ৮০ ফুট উচচতার বিশাল গাছ। এই মিরাকেল ঘটতে সাধারনত ৪ থেকে ৭ বছর সময় লাগে। কখোনো ৪ বছর আবার কখোনো ৫ বছর বা ৭ বছর।
বিনিয়োগের খেএেও ঠিক একই রকম ঘটে। “এত দিন হল ইনভেসট করেছি, কিছুই তো হল না”, “আমার ফিকসড ডিপোজিট অনেক ভালো ”, “মিউচ্যাল ফান্ডে আর জীবনে ইনভেসট করব না, সব ফালতু”- এই ধরনের কথা বলে হতাশ চাষীর মত অনেকেই ক্ষেত্র ছেড়ে চলে যায়।
অথচ ভারতে Equity Market এর দিকে যদি একটু তাকানো যায় তাহলে দেখতে পাবেন যে যখনই এই মার্কেট Bull run শুরু করে তখন এর গতি হয় খুব দ্রুত। যেমন ধরুন ফেবরুয়ারী ২০০০ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০০৭ সাল , ঐ সময়ে Equity Market প্রায় ২৪০% রীটার্ন দিয়েছে। Sensex ৬০০০ থেকে ২০৫০০ পৌঁছেছে।
ঘটনাটি হল যারাই ফেরুয়াবী ২০০০ সালে বিনিয়োগ শুরু করেছে তারা কি সবাই একই রীটার্ন পেয়েছেন? তা কিন্তু নয়। ২০০০ সালে বিনিয়োগ শুরু করেও প্রায় ৪.৫ বছর পরেও তিনি কোনো রীটার্নই পান নি। কারন ২০০০ সালের ফেবরুয়ারী তে সেনসেক্স ছিল ৬০০০ আর ২০০৪ সালে সেনসেক্স ছিল ২৬০০ আবার পুনরায় নভেম্বর ২০০৪ সালে হয় ৬০০০। মনে রাখতে হবে ঐ ২৪০% রীটার্ন যারা পেয়েছেন তাদেরকে কিন্তু ৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।
Long term Equity investment এর মাধ্যমে যদি আপনাকে Financial Goal fulfil করতে হয় তাহলে প্রয়োজন বিনিয়োগের সঠিক মানসিকতা বা Proper Investment Mentalityএবং Patience।
2 thoughts on “ইকুইটিতে বিনিয়োগ করলেই কি ভালো রীটার্ন সম্ভব ?”
Patience for investor is mostly essential. It can be developed thru’ proper learning and experience. Here is the importance of a financial advisor. In our country most of us is not aware about the role of an expert financial advisor. Hope , the situation will improve in near future. Please go ahead…. With thankful regards.
Thanks